শিক্ষনীয় গল্প জীবনের মূল্যবান কিছু শিক্ষা দেয় । এই আর্টিকেলে বুদ্ধি, মানবিকতা এবং একসঙ্গে কাজ করার গুরুত্ব নিয়ে অনুপ্রেরণামূলক গল্প তুলে ধরা হয়েছে।

শিক্ষনীয় গল্প shikkhonio golpo

শিক্ষনীয় গল্প – ০১: “বৃদ্ধের বুদ্ধি”

একটি ছোট্ট গ্রামে বাস করত এক বৃদ্ধ কৃষক। তার ছিল একটি ছোট জমি আর একটি পুরোনো গরু। সেই গরু দিয়ে তিনি জমিতে হাল চাষ করতেন। বৃদ্ধের জীবন ছিল খুবই সাধারণ, কিন্তু তিনি ছিলেন সততা ও বুদ্ধিমত্তার প্রতীক।

একদিন তার গরুটি হারিয়ে গেল। গ্রামের মানুষ এসে বলল,
— “আপনার তো অনেক ক্ষতি হলো! আপনি কিভাবে এখন জমি চাষ করবেন?”

বৃদ্ধ মুচকি হেসে বলল,
— “ক্ষতি হতে পারে, আবার লাভও হতে পারে। দেখা যাক!”

কয়েকদিন পর, সেই গরুটি ফিরে এলো এবং তার সঙ্গে আরো তিনটি বন্য গরু নিয়ে এল। গ্রামবাসী অবাক হয়ে বলল,
— “আপনার তো অনেক বড় লাভ হলো! এত গরু পেয়ে আপনি ধনী হয়ে গেলেন।”

শিক্ষনীয় গল্প shikkhonio golpo

বৃদ্ধ মৃদু হেসে বলল,
— “লাভ হতে পারে, আবার ক্ষতিও হতে পারে। দেখা যাক!”

পরদিন বৃদ্ধের ছেলে নতুন একটি গরু পোষার সময় আহত হলো এবং তার পা ভেঙে গেল। গ্রামবাসী এসে দুঃখ করে বলল,
— “আপনার তো অনেক বড় ক্ষতি হলো! আপনার ছেলে তো এখন কাজ করতে পারবে না।”

বৃদ্ধ শান্তভাবে বলল,
— “ক্ষতি হতে পারে, আবার লাভও হতে পারে। দেখা যাক!”

এর কয়েকদিন পর, সেই দেশে যুদ্ধ শুরু হলো। গ্রাম থেকে সব যুবককে যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হলো, কিন্তু বৃদ্ধের ছেলে পা ভাঙা থাকায় যুদ্ধে যেতে পারল না। গ্রামবাসী আবার এসে বলল,
— “আপনার তো অনেক ভাগ্য! আপনার ছেলেকে যুদ্ধে যেতে হলো না।”

বৃদ্ধ হেসে বলল,
— “জীবনের প্রতিটি ঘটনায় ভালো-মন্দ মিশে থাকে। সবকিছুই সময়ের উপর নির্ভরশীল।”

শিক্ষা:
জীবনের প্রতিটি ঘটনা আমাদের কাছে ভালো বা খারাপ বলে মনে হলেও, প্রকৃতপক্ষে তা কেমন হবে, তা সময়ই বলে দেয়। ধৈর্য ও ইতিবাচক মনোভাব জীবনের যেকোনো পরিস্থিতিতে সেরা সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

 

শিক্ষনীয় গল্প -০২: মানুষ হওয়ার গল্প

শিক্ষনীয় গল্প shikkhonio golpo

ছোট্ট একটি গ্রাম ছিল, যেখানে কেবল পশু-পাখিরা বাস করত। সেই গ্রামের শাসক ছিল একটি প্রাজ্ঞ পেঁচা, যাকে সবাই “জ্ঞানী পেঁচা” বলে ডাকত। একদিন গ্রামের প্রাণীগুলো আলোচনা করছিল, তারা মানুষের গল্প শুনেছে—মানুষ নাকি সবকিছু তৈরি করতে পারে, অনেক বুদ্ধিমান।

তখন একটি কৌতূহলী খরগোশ বলল,
— “মানুষ হওয়া কি এতই কঠিন? যদি আমরা চেষ্টা করি, তাহলে কি মানুষ হতে পারি?”

জ্ঞানী পেঁচা মুচকি হেসে বলল,
— “মানুষ হওয়ার জন্য শুধু শক্তি বা বুদ্ধি নয়, দরকার হৃদয় ও মানবিকতা। তোমরা যদি প্রমাণ করতে পারো যে তোমাদের মধ্যে সত্যিকারের মানবিকতা আছে, তবে হয়তো মানুষ হওয়ার রহস্য বুঝতে পারবে।”

এই শর্ত শুনে সবাই নিজের মতো করে চেষ্টা করতে শুরু করল।

প্রথমে সিংহ বলল,
— “মানুষ শক্তিশালী। আমি সবার থেকে শক্তিশালী, তাই আমিই প্রকৃত মানুষ।”

পেঁচা বলল,
— “শক্তি দিয়ে মানুষ হয় না।”

তখন ময়ূর এসে বলল,
— “মানুষ সুন্দর জিনিস তৈরি করতে পারে। আমার রঙিন পেখমই প্রমাণ, আমিই প্রকৃত মানুষ।”

পেঁচা হেসে বলল,
— “রূপ দিয়ে মানুষ হয় না।”

এরপর একটি চড়ুই পাখি এল। তার ঠোঁটে ছিল একটি ভাঙা ডাল। সে বলল,
— “আজ সকালে একটি পাখির বাসা ঝড়ে পড়ে গিয়েছিল। আমি সেই বাসা নতুন করে তৈরি করে দিয়েছি। আমি জানি না আমি মানুষ হতে পেরেছি কি না, তবে আমি শুধু সাহায্য করতে চেয়েছি।”

জ্ঞানী পেঁচা তখন গম্ভীর হয়ে বলল,
— “তুমি সত্যিকারের মানবিকতার পরিচয় দিয়েছ। মানুষ হওয়ার প্রথম শর্ত হলো অন্যের কষ্ট বুঝতে পারা এবং তা লাঘব করার চেষ্টা করা।”

সব প্রাণী একমত হলো যে, মানুষ হওয়া শুধু বাহ্যিক গুণ নয়; হৃদয়ের গভীরে থাকা সহানুভূতি ও ভালোবাসাই মানুষ হওয়ার মূল শর্ত।

শিক্ষা:
মানুষ হওয়ার মানে শুধু বুদ্ধি বা শক্তিশালী হওয়া নয়; বরং অন্যের জন্য কিছু করার ইচ্ছা এবং মানবিক গুণাবলি অর্জন করাই প্রকৃত মানুষের পরিচয়।

 

শিক্ষনীয় গল্প ০৩: জীবনের সত্যিকারের জয়

শিক্ষনীয় গল্প shikkhonio golpo

একদা, একটি গ্রামে “আদর্শপুর” নামে একটি স্কুল ছিল। সেখানে পড়ত দুই বন্ধু—ইমরান এবং রাকিব। তারা দুজনই খুব মেধাবী, কিন্তু তাদের লক্ষ্য ছিল ভিন্ন। ইমরান চেয়েছিল জীবনে অনেক ধনী হতে, আর রাকিব চেয়েছিল মানুষের উপকার করতে।

স্কুলের শিক্ষক একদিন তাদের বললেন,
— “জীবনের সত্যিকারের জয় মানে শুধু নিজের স্বপ্নপূরণ নয়, অন্যদের জন্য কিছু করে যাওয়া।”

ইমরান হেসে বলল,
— “স্যার, যদি আমি অনেক টাকা উপার্জন করি, সেটাই হবে আমার জীবনের জয়। মানুষ টাকা ছাড়া কিছুই করতে পারে না।”

রাকিব শান্তভাবে বলল,
— “স্যার, আমি বিশ্বাস করি, মানুষের উপকার করাই জীবনের আসল জয়। আমি একদিন কিছু করে তা প্রমাণ করব।”

সময় কেটে গেল। ইমরান শহরে গিয়ে বড় ব্যবসায়ী হলো। তার বাড়ি, গাড়ি, টাকা—সবই হলো। কিন্তু সে সবসময় ব্যস্ত থাকত এবং একা বোধ করত।

অন্যদিকে, রাকিব গ্রামে থেকেই শিক্ষকতা শুরু করল। সে গ্রামের দরিদ্র শিশুদের বিনা পয়সায় পড়াত। গ্রামের সবাই তাকে ভালোবাসত।

একদিন ইমরান ব্যবসার কাজে গ্রামের কাছে এলো। সেখানকার মানুষদের খুশি মুখ দেখে সে অবাক হয়ে রাকিবের বাড়ি গেল। সে দেখল, রাকিব সাধারণ পোশাক পরে শিশুদের পড়াচ্ছে।

ইমরান বলল,
— “তোর তো কিছুই নেই! তুই কীভাবে এত খুশি?”

রাকিব হাসল এবং বলল,
— “আমার খুশি টাকার উপর নির্ভর করে না। আমি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। সেটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় জয়।”

ইমরান চুপ হয়ে গেল। সেদিন সে বুঝল, জীবনের সত্যিকারের জয় টাকা-পয়সা নয়, বরং মানুষের অন্তরে জায়গা করে নেওয়া।

শিক্ষা:
সত্যিকারের জয় শুধু ধনসম্পত্তি অর্জন নয়, বরং অন্যদের জীবনে পরিবর্তন আনা এবং তাদের ভালোবাসা অর্জন করাই জীবনের আসল অর্থ।

শিক্ষনীয় গল্প ০৪: বনের মহাসভা

শিক্ষনীয় গল্প shikkhonio golpo

শিক্ষনীয় গল্প shikkhonio golpo
একসময় একটি ঘন জঙ্গলে পশুদের নিয়ে একটি মহাসভা আয়োজন করা হলো। সেই জঙ্গলের রাজা সিংহ একদিন ঘোষণা দিল,

— “আমাদের বন অনেক সুন্দর, কিন্তু সবাই নিজেদের মতো করে জীবন কাটাচ্ছে। তাই আজ আমরা সবাই মিলে শপথ করব যে আমরা জঙ্গলকে আরও ভালো জায়গা বানাব।”

সব পশু-পাখি রাজা সিংহের ডাকে মহাসভার জন্য জড়ো হলো। সিংহ বলল,
— “আজ আমি জানতে চাই, আমাদের জঙ্গলে কে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং সেরা?”

প্রথমে হাতি উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
— “আমিই সেরা। আমি শক্তিশালী, আমি গাছ উপড়ে ফেলতে পারি। বন রক্ষায় আমার মতো কেউ নেই।”

তারপর হরিণ বলল,
— “আমার সৌন্দর্য আর গতিশীল দৌড় বনকে জীবন্ত রাখে। আমিই সেরা।”

পাখিরা চেঁচামেচি করে বলল,
— “আমরা আকাশে উড়ে বনের খবর ছড়িয়ে দিই। আমাদের ছাড়া বন অন্ধকার হয়ে যেত। আমরাই সেরা।”

একটি ছোট্ট মৌমাছি মাটির এক কোণে বসে সব শুনছিল। অনেকক্ষণ পর সে ভয়ে ভয়ে বলল,
— “আমি হয়তো ছোট, কিন্তু আমার কাজও গুরুত্বপূর্ণ। আমি ফুলের পরাগায়ন করি, আর তাতেই বনজীবনের চক্র সম্পূর্ণ হয়। তবে আমি জানি, একা কেউই সেরা নয়। সবাই মিলেই আমরা বনকে টিকিয়ে রাখি।”

মৌমাছির কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল। সিংহ দাঁড়িয়ে বলল,
— “মৌমাছি ঠিক বলেছে। একা কেউই সেরা নয়। শক্তি, সৌন্দর্য, বুদ্ধি, আর ছোট কাজগুলো মিলে আমাদের জঙ্গলের জীবন গড়ে ওঠে। আজ থেকে আমরা সবাই মিলে বন রক্ষার জন্য কাজ করব।”

সবাই একসঙ্গে মাথা নত করে সম্মতি দিল। সেই দিন থেকে জঙ্গলের প্রতিটি প্রাণী নিজেদের মধ্যে সৌহার্দ্য বজায় রেখে কাজ করল, আর তাদের বন হয়ে উঠল আরও সমৃদ্ধ।

শিক্ষা:
প্রত্যেকের নিজস্ব গুরুত্ব আছে। একা কেউই সেরা নয়, বরং একসঙ্গে কাজ করেই সত্যিকারের সাফল্য অর্জন করা যায়। আরও পড়ুনঃ শিক্ষনীয় গল্প shikkhonio golpo

শিক্ষনীয় গল্প০৫: “বুদ্ধিমান শেয়ালের কৌশল”

একদিন বনের সব পশু ভয় পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ল। কারণ, জঙ্গলে একটি হিংস্র বাঘ ঢুকে পড়েছে, যে প্রতিদিন কোনো না কোনো পশুকে শিকার করছে। সবাই বনের কেন্দ্রে জড়ো হয়ে এই সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা শুরু করল।

সিংহ বলল,
— “আমাকে তার মুখোমুখি হতে দাও। আমি তাকে লড়াইয়ে হারিয়ে দেব।”

তবে হরিণ ভয় পেয়ে বলল,
— “না, বাঘ অনেক ভয়ঙ্কর। লড়াই করলে আরও প্রাণী মারা যাবে। আমাদের অন্য কোনো উপায় বের করতে হবে।”

এই সময় একটি চতুর শেয়াল সামনে এসে বলল,
— “রাজা সিংহ, আমি একটি কৌশল প্রস্তাব করতে চাই। যদি আপনারা আমাকে অনুমতি দেন, আমি বাঘকে এমনভাবে বোকা বানাব যে সে আর কখনো এ জঙ্গলে আসবে না।”

সবার সম্মতি পেয়ে শেয়াল তার পরিকল্পনা শুরু করল।

সে বাঘের কাছে গিয়ে কৃত্রিম ভয় দেখিয়ে বলল,
— “তুমি কি জানো, এই বনে আরেকটি বাঘ এসেছে, যে তোমার থেকেও শক্তিশালী? সে বলেছে, সে তোমাকে খুঁজে বের করবে এবং এখান থেকে তাড়িয়ে দেবে।”

বাঘ প্রথমে হেসে বলল,
— “আমার থেকে শক্তিশালী আরেকটি বাঘ? সেটা আমি নিজেই দেখে নেব। কোথায় সে?”

শেয়াল তাকে একটি বড় কুয়োর কাছে নিয়ে গেল। কুয়োর মধ্যে পানি এত পরিষ্কার ছিল যে বাঘ তার নিজের প্রতিবিম্ব দেখল। সে ভাবল, এটি সত্যিই আরেকটি বাঘ। বাঘ গর্জন করতেই পানির প্রতিবিম্বও গর্জন করে উঠল। এতে বাঘ আরও রেগে গিয়ে কুয়োর মধ্যে ঝাঁপ দিল এবং ডুবে গেল।

শেয়াল ফিরে গিয়ে সবাইকে জানাল,
— “বাঘ আর কখনো ফিরে আসবে না।”

সব প্রাণী আনন্দে উল্লাস করতে শুরু করল এবং শেয়ালের বুদ্ধি ও সাহসের প্রশংসা করল।

কিছু হাসির গল্পঃ ক্লিক করুন

 

আরওঃ শিক্ষনীয় গল্প shikkhonio golpo

শিক্ষা:
কেবল শক্তি নয়, বুদ্ধি দিয়ে যেকোনো সমস্যা সমাধান করা যায়। শিক্ষনীয় গল্প shikkhonio golpo

Follow me On Facebook

Scroll to Top