একটি অসমাপ্ত প্রেমের গল্প
প্রথম দেখা
নওরীন আর আদিত্যর দেখা হয়েছিল একেবারেই কাকতালীয়ভাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন, নওরীন ক্যাম্পাসের লাইব্রেরিতে ঢোকার সময় হঠাৎ কারও সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ঠিক তখনই একজোড়া দৃঢ় হাত তাকে সামলে নিল।
— “সরি! আপনি ঠিক আছেন?”
নওরীন লজ্জায় মাথা নিচু করে বলল, “হ্যাঁ, ঠিক আছি। ধন্যবাদ।”
আদিত্যর ঠোঁটে হাসি, “আমি আদিত্য, নতুন স্টুডেন্ট। তুমি?”
— “নওরীন। আমিও নতুন।”
সেই প্রথম দেখা, আর তারপর ধীরে ধীরে তাদের বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। একসাথে ক্লাস করা, ক্যান্টিনে আড্ডা, গ্রুপ স্টাডি— সবকিছুতেই যেন দুজন একে অপরের ছায়াসঙ্গী হয়ে উঠল।
ভালোবাসার অজানা অনুভূতি
নওরীন বুঝতে পারছিল, তার মনের কোণে একটা অদ্ভুত অনুভূতি জন্ম নিচ্ছে। আদিত্যর সাথে সময় কাটানো মানেই একরকম প্রশান্তি। কিন্তু সে নিজেকে বারবার বলছিল, “এটা কেবল বন্ধুত্ব, এর বেশি কিছু না।”
অন্যদিকে, আদিত্য অনেক আগেই বুঝে গিয়েছিল তার মনের অবস্থা। নওরীনের হাসি, তার চোখের চাহনি, তার ছোট ছোট অভ্যাস— সবকিছুতেই সে মুগ্ধ হয়ে যেত। কিন্তু বলার সাহস পায়নি।
ভালোবাসার স্বীকারোক্তি
এক সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের লেকে বসে দুজন গল্প করছিল। হঠাৎ আদিত্য বলল,
— “নওরীন, আমি একটা কথা বলতে চাই।”
— “বলো।”
— “আমি জানি না, এটা কীভাবে বলা উচিত। কিন্তু আমি তোমাকে পছন্দ করি, না… ভালোবাসি।”
নওরীন অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল। তার হৃদয় দ্রুত স্পন্দিত হচ্ছিল, কিন্তু মুখে কোনো কথা আসছিল না। কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকার পর সে বলল,
— “আদিত্য, আমি… আমি জানি না কী বলবো।”
আদিত্য মৃদু হেসে বলল, “তোমার কোনো তাড়া নেই। আমি শুধু আমার মনের কথা বললাম। উত্তরটা তুমি সময় নিয়ে দিও।”
ভালোবাসার পথচলা
এরপর নওরীন ধীরে ধীরে বুঝতে পারল, আদিত্যর প্রতি তার অনুভূতিও ভিন্ন কিছু নয়। কিছুদিন পর, এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় নওরীন বলল,
— “আদিত্য, আমি তোমার ভালোবাসার উত্তর দিতে প্রস্তুত। আমি তোমাকেও ভালোবাসি।”
সেদিন বৃষ্টি ভিজে দুজন একসাথে হাঁটছিল, যেন পুরো পৃথিবী তাদের ভালোবাসার সাক্ষী।
বিদায়ের করুণ পরিণতি
সবকিছু সুন্দরভাবেই চলছিল, কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস কেউ ঠেকাতে পারে না। পড়াশোনা শেষে নওরীন উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চাইল, কিন্তু আদিত্য চায় দেশে থেকে ক্যারিয়ার গড়তে।
— “তুমি কি আমাকে রেখে চলে যাবে?”
— “আদিত্য, এটা শুধু কয়েক বছরের ব্যাপার। আমরা চাইলে সবকিছু ঠিক রাখতে পারি।”
কিন্তু দূরত্ব ধীরে ধীরে তাদের ভালোবাসার মাঝখানে দেয়াল তৈরি করল। ফোন কল কমে গেল, কথাবার্তা কমতে লাগল। একসময় নওরীন ব্যস্ত হয়ে পড়ল নতুন জীবনে, আর আদিত্য ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে নিল।
একদিন হঠাৎ নওরীন জানতে পারল, আদিত্য অন্য কাউকে বিয়ে করতে চলেছে।
— “তুমি সত্যি আমাকে ভুলে গেলে?”
— “না, নওরীন। আমি শুধু বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছি।”
সেদিন নওরীন বুঝল, সব প্রেমের গল্প সুখের সমাপ্তি পায় না। কিছু প্রেম চিরকাল অসমাপ্ত রয়ে যায়…
তোমার অপেক্ষায়
অচেনা অনুভূতির শুরু
রাফিদ আর সায়মার পরিচয় হয়েছিল এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে। বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা এক মেয়ে কাঁদছিল। পাশে দাঁড়ানো রাফিদ কিছুক্ষণ লক্ষ্য করল, তারপর ধীরে ধীরে কাছে গিয়ে বলল,
— “আপনি ঠিক আছেন?”
মেয়েটি চোখ মুছে তাকাল, তারপর মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি।”
রাফিদ একটু দ্বিধায় পড়ল, কিন্তু চলে যেতে মন চাইছিল না।
— “আমি রাফিদ। আপনার কিছু দরকার হলে বলতে পারেন।”
মেয়েটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “আমি সায়মা। আর কিছু দরকার নেই। ধন্যবাদ।”
রাফিদ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেল। কিন্তু ওই এক মুহূর্তেই সায়মার চোখে যে গভীর কষ্ট দেখেছিল, সেটা তার মনে গেঁথে রইল।
আবার দেখা
এরপর তাদের দেখা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে। রাফিদ তখন বুঝল, সায়মা তারই সহপাঠী!
— “তুমি এখানেও?”
সায়মা মৃদু হেসে বলল, “হ্যাঁ। আশা করিনি আমাদের আবার দেখা হবে।”
সেদিন থেকেই ধীরে ধীরে তাদের বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। সায়মা খুব বেশি কথা বলত না, কিন্তু রাফিদের সঙ্গে কথা বলতে যেন সে স্বস্তি বোধ করত।
ভালোবাসার উপলব্ধি
সময়ের সাথে সাথে রাফিদের অনুভূতি বদলাতে থাকল। সায়মার উপস্থিতি তাকে অজানা এক সুখ দিত। কিন্তু সে কখনো প্রকাশ করেনি।
একদিন ক্যাম্পাসের লাইব্রেরিতে বসে ছিল তারা। হঠাৎ সায়মা বলল,
— “রাফিদ, কেউ কি কখনো তোমার জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে?”
রাফিদ একটু চমকে গেল। তারপর মৃদু হাসল, “হয়তো হয়েছে। কিন্তু তাকে আমি কখনো বলিনি।”
সায়মা তাকিয়ে রইল, তারপর গভীর দৃষ্টিতে বলল, “যদি কারো জন্য এমন অনুভূতি থাকে, তবে সেটা বলার অপেক্ষা করা উচিত নয়।”
রাফিদের মনে হলো, সায়মার কথাগুলো যেন তার জন্যই বলা। কিন্তু সে তখনও কিছু বলতে পারল না।
অপ্রত্যাশিত সত্য
একদিন হঠাৎ সায়মা ক্লাসে এল না। পুরো সপ্তাহ কেটে গেল, কিন্তু তার কোনো খবর নেই।
রাফিদ চিন্তিত হয়ে পড়ল। অবশেষে তার ঠিকানা খুঁজে বের করল।
সায়মার বাসার সামনে গিয়ে দেখল, বাড়ির পরিবেশ থমথমে। দরজা খুললেন সায়মার মা।
— “আপনি কে?”
— “আমি সায়মার বন্ধু, রাফিদ। ও কেমন আছে?”
মহিলার চোখে পানি চলে এলো।
— “ও তো হাসপাতালে, তুমি জানো না?”
রাফিদের মাথা ঘুরে গেল।
— “হাসপাতালে? কেন?”
— “ওর ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়েছে।”
ভালোবাসার স্বীকারোক্তি
রাফিদ দৌড়ে হাসপাতালে গেল। সায়মা বিছানায় শুয়ে ছিল, চোখ দুটো ক্লান্ত।
— “তুমি আমাকে বললে না কেন?”
সায়মা মৃদু হাসল। “আমি চাইনি তুমি দুঃখ পাও।”
রাফিদের চোখ ভিজে গেল।
— “সায়মা, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমার সাথে থাকব, সবসময়।”
সায়মা চোখ বন্ধ করে বলল, “আমিও তোমাকে ভালোবাসি, রাফিদ। কিন্তু সময় অনেক কম…”
অপেক্ষার শেষ অধ্যায়
সায়মা বেশি দিন টিকল না। কয়েক মাসের মধ্যে সে পৃথিবী থেকে বিদায় নিল।
কিন্তু রাফিদ আজও সায়মার জন্য অপেক্ষা করে, প্রতিটি সন্ধ্যায়। সে জানে, সায়মা নেই, কিন্তু তার ভালোবাসা আছে— চিরকাল থাকবে।