ল্যাপটপে উইন্ডোজ ইনস্টল করার প্রক্রিয়া নিয়ে বিশাল আর্টিকেল লেখার জন্য, আমি আপনাকে কয়েকটি পর্যায়ে বিভক্ত করে দিচ্ছি যাতে পুরো প্রক্রিয়া পরিষ্কার এবং সহজভাবে বোঝানো যায়।

ল্যাপটপে উইন্ডোজ ইনস্টল করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ

১. একটি উইন্ডোজ ইনস্টলেশন ডিস্ক/ইউএসবি ফ্ল্যাশ ড্রাইভ
২. বুটেবল উইন্ডোজ ইনস্টলেশন মিডিয়া (যেমন ইউএসবি বা ডিস্ক)
৩. পিসি বা ল্যাপটপ যা উইন্ডোজের জন্য উপযুক্ত সিস্টেম রিকোয়ারমেন্ট পূর্ণ করে।
৪. ইন্টারনেট কানেকশন (যদি আপনি অনলাইনে উইন্ডোজ ডাউনলোড করতে চান)
৫. ড্রাইভার ও সফটওয়্যার (যদি আপনার মাদারবোর্ড বা অন্যান্য ডিভাইসের ড্রাইভার আলাদা থাকে)

উইন্ডোজ ইনস্টলেশন পদক্ষেপসমূহ

১. উইন্ডোজ ইনস্টলেশনের জন্য বুটেবল ইউএসবি তৈরি করা

উইন্ডোজ ইনস্টল করতে প্রথমে আপনার একটি বুটেবল ইউএসবি তৈরি করতে হবে:

  • মাইক্রোসফটের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে উইন্ডোজের ISO ফাইল ডাউনলোড করুন।
  • Windows Media Creation Tool ব্যবহার করে বুটেবল ইউএসবি তৈরি করুন।

২. ল্যাপটপে ইউএসবি বা ডিস্ক থেকে বুট করা

  • BIOS/UEFI সেটিংস: ল্যাপটপ চালু করার পর BIOS/UEFI প্রবেশ করতে F2/F12/DEL চাপুন (মডেল অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে)।
  • বুট অর্ডার সেট করা: BIOS/UEFI থেকে বুট অর্ডারে ইউএসবি বা ডিস্ক সেট করুন যাতে প্রথমে সেই ডিভাইসটি বুট হয়।

৩. উইন্ডোজ ইনস্টলেশন প্রক্রিয়া

  • ল্যাপটপ রিস্টার্ট করুন: ইউএসবি বা ডিস্ক সংযুক্ত থাকার পর, ল্যাপটপ রিস্টার্ট করুন এবং উইন্ডোজ ইনস্টলেশন শুরু হবে।
  • ভাষা নির্বাচন: উইন্ডোজ ইনস্টলার শুরু হলে আপনার ভাষা, সময়, কীবোর্ড লেআউট নির্বাচন করুন।
  • ইনস্টলেশন টুলস: “Install Now” বাটনে ক্লিক করুন।
  • লাইসেন্স কী প্রদান: উইন্ডোজের লাইসেন্স কী প্রবেশ করান বা Skip করুন যদি আপনার সিস্টেমের লাইসেন্স কী আগে থেকেই আছে।

৪. পার্টিশন সিলেকশন এবং ফরম্যাটিং

  • পার্টিশন নির্বাচন: আপনার হার্ড ড্রাইভ বা SSD তে উইন্ডোজ ইনস্টল করার জন্য পার্টিশন নির্বাচন করুন।
  • ফরম্যাটিং: ইনস্টলেশন শুরু হওয়ার আগে পুরনো ডাটা মুছে নতুন পার্টিশন তৈরি করতে পারেন। তবে, আপনার যদি প্রয়োজনীয় ডেটা থাকে, তাহলে আগে ব্যাকআপ নিন।

৫. উইন্ডোজ ইনস্টলেশন শুরু এবং ফিনিশিং

  • ইনস্টলেশন শুরু: নির্বাচিত পার্টিশনে উইন্ডোজ ইনস্টলেশন শুরু হবে। এই প্রক্রিয়া কিছু সময় নিতে পারে (তিন-চার ঘণ্টা হতে পারে, নির্ভর করে ল্যাপটপের কনফিগারেশনের উপর)।
  • রিস্টার্ট: একবার ইনস্টলেশন হয়ে গেলে, ল্যাপটপ রিস্টার্ট হবে।

৬. উইন্ডোজ কনফিগারেশন

  • প্রাথমিক সেটআপ: উইন্ডোজ চালু হওয়ার পর আপনাকে কিছু প্রাথমিক সেটআপ করতে হবে, যেমন টাইমজোন, কন্ট্রোল প্যানেল সেটিংস, ব্যবহারকারী অ্যাকাউন্ট তৈরি ইত্যাদি।
  • ইন্টারনেট কানেকশন: ইন্টারনেট কানেক্ট করুন এবং উইন্ডোজ আপডেট ডাউনলোড করে ইনস্টল করুন।

৭. ড্রাইভার ইনস্টলেশন

  • ড্রাইভার আপডেট: ল্যাপটপের মাদারবোর্ড, গ্রাফিক্স, সাউন্ড এবং অন্যান্য ডিভাইসের ড্রাইভার ইনস্টল করার জন্য ডিভাইস ম্যানেজার ব্যবহার করুন।
  • অটোমেটিক ড্রাইভার আপডেট: আপনি যদি উইন্ডোজ ১০ বা ১১ ব্যবহার করেন, উইন্ডোজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেশিরভাগ ড্রাইভার আপডেট করে নেয়।

৮. সফটওয়্যার ইনস্টলেশন

  • আপনার প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার যেমন ওয়েব ব্রাউজার, অফিস স্যুট, মিডিয়া প্লেয়ার ইত্যাদি ইনস্টল করুন।

পরবর্তী ধাপটি হবে, ইনস্টলেশন সম্পূর্ণ হওয়ার পর উইন্ডোজের কনফিগারেশন এবং ফিচার সেটআপ। আসুন এবার একটু মানবিকভাবে বিষয়গুলো বুঝে নিই, যেন আপনি সহজে বুঝতে পারেন:

৯. প্রাথমিক সেটআপ এবং কনফিগারেশন

উইন্ডোজ ইনস্টল হওয়ার পর, আপনি যে প্রথম জিনিসটি দেখবেন সেটা হবে প্রাথমিক কনফিগারেশন স্ক্রীন। এই স্ক্রীনে আপনাকে কিছু মৌলিক সেটিংস করতে হবে। এতে আপনাকে ভাষা, টাইম জোন, কী-বোর্ড লেআউট নির্বাচন করতে হবে। একে যেন মনে হয়, আপনি নিজের জায়গাটাকে সাজাচ্ছেন।

  • ভাষা নির্বাচন: যদি আপনি বাংলায় কাজ করেন, তবে “বাংলা” ভাষা নির্বাচন করতে পারেন। না হলে ইংরেজি রাখতে পারেন।
  • টাইম জোন সেট করা: আপনার দেশের টাইম জোন নির্বাচন করুন, যেমন “ঢাকা” বা “কলকাতা”।
  • কী-বোর্ড লেআউট: যদি আপনি ইংরেজি বা বাংলা লিখতে চান, সেটি বেছে নিন।

এগুলো শেষ করার পর Next বা Continue বাটনে ক্লিক করুন।

১০. অ্যাকাউন্ট সেটআপ এবং মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট

এখন আপনি যদি মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে চান, তবে আপনাকে আপনার অ্যাকাউন্ট লগ ইন করতে হবে। এটি আপনাকে অনলাইনে আপনার ফাইলগুলি সিঙ্ক করতে সাহায্য করবে, এবং উইন্ডোজের কিছু ফিচার ব্যবহার করতে দিবে।

  • যদি আপনি মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার না করতে চান, তাহলে অফলাইন অ্যাকাউন্ট সিলেক্ট করতে পারেন। এটি আপনার ব্যক্তিগত পাসওয়ার্ড বা পিন দিয়ে সাইন ইন করতে সহায়তা করবে।

একবার আপনি আপনার অ্যাকাউন্ট তৈরি বা লগ ইন করলে, উইন্ডোজ সেটআপ সেখান থেকে শুরু হবে।

১১. কাস্টমাইজেশন এবং থিম নির্বাচন

এখন, আপনি উইন্ডোজের দেখা-সাজা নিয়ে কিছু কাজ করতে পারেন। উইন্ডোজের থিম বা কালার স্কিম নির্বাচন করতে পারেন, যা আপনার পছন্দের রঙের উপর ভিত্তি করে। আপনি চাইলে একটি টেমপ্লেটও ব্যবহার করতে পারেন যা উইন্ডোজ নিজেই অফার করে।

এছাড়া, স্টার্ট মেনু কাস্টমাইজ করতে, টাস্কবার এর অবস্থান পরিবর্তন করতে, বা উইন্ডোজের টেক্সট সাইজ ছোট বা বড় করতে পারবেন।

১৩. ব্যাকআপ এবং রিস্টোরেশন সেটআপ

একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ হল আপনার ফাইল ব্যাকআপ রাখা। যদি কখনো কিছু সমস্যা হয়, আপনার ফাইলগুলো হারিয়ে না যায় সেজন্য আপনি উইন্ডোজের ব্যাকআপ সিস্টেম ব্যবহার করতে পারেন।

  • আপনি OneDrive ব্যবহার করে ক্লাউডে ব্যাকআপ রাখতে পারেন।
  • উইন্ডোজে File History ফিচারও আছে যা আপনাকে আপনার ডেটা সেভ রাখার সুযোগ দেয়।

১৪. ড্রাইভার আপডেটস

এখন, আপনার সিস্টেমে সঠিক ড্রাইভার ইনস্টল করা খুবই জরুরি। উইন্ডোজ অনেক ড্রাইভার অটোমেটিক্যালি ইনস্টল করে ফেললেও, কিছু ড্রাইভার আপনার ল্যাপটপের মাদারবোর্ড, গ্রাফিক্স, সাউন্ড ইত্যাদি অংশের জন্য আলাদাভাবে ইনস্টল করতে হতে পারে।

আপনি Device Manager ব্যবহার করে এডভান্সড ড্রাইভার আপডেট করতে পারেন বা ল্যাপটপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে ম্যানুয়ালি ড্রাইভার ডাউনলোড করে ইনস্টল করতে পারেন।

Scroll to Top